ফটোগ্রাফি করে আয় করার ৯টি মাধ্যম
এক সময় ফটোগ্রাফিকে শখ হিসেবে দেখা হলেও বর্তমানে ফটোগ্রাফি করে আয় করার অসংখ্য কার্যকর উপায় রয়েছে। আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে দক্ষ হন, তাহলে ফটোগ্রাফি করে আয় করা আপনার জন্য দারুণ একটি সুযোগ হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, ফটোগ্রাফি করে কিভাবে আয় করা যেতে পারে তার ৯টি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত।
ফটোগ্রাফি সার্ভিস
ফটোগ্রাফি করে আয় করার সবচেয়ে সহজ আর কার্যকর উপায় হলো ফটোগ্রাফি ভিত্তিক সেবা প্রদান করা। একজন ফটোগ্রাফার একাধিক ধরনের ফটোগ্রাফি সার্ভিস প্রদান করে আয় করতে পারেন।
ওয়েডিং ফটোগ্রাফি আমাদের দেশে ফটোগ্রাফারদের আয়ের একটি অন্যতম উৎস। ওয়েডিং ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে অল্প কিছু সময় দিয়ে বেশ ভালো মানের আয় করা যায়। এছাড়াও নিজের ফটোগ্রাফি ভিত্তিক সার্কেল বড় করতেও ওয়েডিং ফটোগ্রাফি বেশ কাজে দেয়।
ওয়েডিং ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ফ্যাশন ফটোগ্রাফি, ইভেন্ট ফটোগ্রাফি, পোর্ট্রেইট ফটোগ্রাফি, ইত্যাদিও বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয়ভাবে যেকোনো জায়গাতেই এসব কাজের জন্য ফটোগ্রাফার এর ভালোই চাহিদা রয়েছে। একটি ফেসবুক পেজ তৈরী করে আপনি যেসব ধরনের ফটোগ্রাফি করেন সেসব সার্ভিস হিসেবে এড করে খুব সহজেই ক্লায়েন্ট পেতে পারেন।
স্টক ফটোগ্রাফি করে আয়
স্টক ফটোগ্রাফি করেও ফটোগ্রাফির মাধ্যমে বেশ ভালো মানের ইনকাম করা সম্ভব। স্টক ফটোগ্রাফির সুবিধা হলো একবার কাজ করার পরেই স্টক ফটোগ্রাফি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয় হতে থাকবে।
স্টক ফটোগ্রাফি হলো সাধারণ সব ছবির জন্য ব্যবহৃত একটি টার্ম। মূলত সংবাদ মাধ্যম, ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটসমুহ তাদের ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট এর প্রয়োজনে স্টক ফটোগ্রাফির উপর নির্ভর করে থাকে।
অনলাইনে অসংখ্য স্টক ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইটে আপনার তোলা ছবি আপলোড করে ইনকাম জেনারেট করা সম্ভব। জনপ্রিয় কিছু স্টক ফটোগ্রাফি বিক্রি করার ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করা হলো।
এডোবি স্টক
ফটপশপ, প্রিমিয়ার প্রো, আফটার ইফেক্টস এর মত অসাধারণ সব যুগান্তকারী সফটওয়্যার এর পাশাপাশি স্টক ইমেজও সেল করে থাকে এডোবি। এডোবি স্টক এ ছবির পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন করে আঁকা ইলাস্ট্রেশনও বিক্রি করা যায়। এডোবি প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করে যেকেউ এডোবি স্টক এ ছবি বিক্রি করতে পারবেন। আপলোডকৃত ছবি সেল হলে অর্জিত অর্থ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংকের কমিশন গ্রহণ করে এডোবি স্টক।
শাটারস্টক
স্টক ফটোগ্রাফি করে আয় এর জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট হলো শাটারস্টক। শাটারস্টক এ স্টক ফটোগ্রাফি সেল করতে হলে প্রথমেই একাউন্ট খুলে কন্ট্রিবিউটর হওয়ার জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। শাটারস্টক তাদের কন্ট্রিবিউটরদেরকে ক্ল্যায়েন্টের সাবস্ক্রিপশন মডেলের উপর ভিত্তি করে অর্থ প্রদান করে থাকে।
ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি করে আয়
ফটোগ্রাফির পাশাপাশি আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত সার্ভিস, যেমনঃ ফটো এডিটিং, রিটাচিং, ইত্যাদি পারেন; তবে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ফটোগ্রাফি থেকেই আয় করা সম্ভব। ফাইভার, আপওয়ার্ক এর মতো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত বিভিন্ন সার্ভিসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
ইউটিউব
বর্তমানে আপনি যে কাজেই জড়িত থাকুন না কেনো, ইউটিউব থেকে আয় করার রাস্তা সবার জন্যই খোলা। আপনি জেনে খুশি হবেন, ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম খুব সহজ। আপনি যদি একজন ফটোগ্রাফার হন, একাধিক উপায়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম বা আয় করার পাশাপাশি আপনার ফটোগ্রাফি সার্ভিসের প্রচার ও প্রসার হয়ে যাবে।
আপনি যদি ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন, তবে ইউটিউবে টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করতে পারেন। এছাড়াও ফটোগ্রাফি করার সময় ক্যামেরার পেছনের গল্প নিয়েও ভিডিও বানানো যায়।
ক্যামেরা রিভিউও করতে পারেন বিভিন্ন স্পন্সর এর সাহায্য নিয়ে। আবার ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যাপারগুলো, যেমনঃ ফটো এডিটিং কিংবা রিটারচিং, ইত্যাদিও আপনার ইউটিউব চ্যানেলের শিখিয়ে আয় করতে পারেন।
ফটোগ্রাফি করে আয় – লাইসেন্সিং
আপনার সেরা ফটোগ্রাফিগুলো লাইসেন্স করেও আয় করতে পারবেন ফ্লিকার এর মাধ্যমে। ফ্লিকার একটি ছবি শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম হলেও এর লাইসেন্সিং ফিচার ফটোগ্রাফারদের জন্য আয়ের পথ সুগম করে দিয়েছে।
ফ্লিকার মূলত গেটি ইমেজেস এর সাহায্যে ছবি লাইসেন্স করতে ফটোগ্রাফারদের সাহায্য করে। যখনই কেউ লাইসেন্স করা ফটো দেখে বা কিনে, তখন তা থেকে অর্জিত অর্থ ফটোগ্রাফারদের প্রদান করে ফ্লিকার। ফ্লিকার এর এই লাইসেন্সিং ফিচারকে অনেকটা স্টক ফটোগ্রাফির সাথেও তুলনা করা চলে।
ফ্লিকার এ ছবি আপলোড করার পর ছবির পেজে থাকা “Reuqest to License” এ ক্লিক করে ছবি লাইসেন্সের আবেদন করা যাবে। এরপর আবেদনকৃত ছবি গেটি ইমেজেস এর রিভিউ এর পর এপ্রুভ হলে তারা ফটোগ্রাফারের সাথে যোগাযোগ করবে ছবির পারমিশন, রিলিজ, প্রাইসিং, ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করতে।
অন্যকে শেখানো
অন্যান্য সব স্কিল এর পাশাপাশি ফটোগ্রাফি শেখার জন্য অনেকেরই অধির আগ্রহ রয়েছে। আপনার যদি মনে হয় আপনি যথেষ্ট ভালো ফটোগ্রাফি বুঝেন, তাহলে অন্যদের ফটোগ্রাফি শেখানোর মাধ্যমেও আয় করতে পারেন।
এই ফটোগ্রাফি শেখানোর কাজ অনলাইন ও অফলাইন, দুই পদ্ধতিতেই করা যাবে। অনলাইনে ইউটিউবে ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়াল আপলোড করতে পারেন। আবার চাইলে ফটোগ্রাফির নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোর্স তৈরি করে তা বিক্রিও করতে পারেন।
অনলাইনের পাশাপাশি যারা ফটোগ্রাফি শিখতে চায়, তাদেরকে হাতে কলমে নির্দিষ্ট অংকের একটি অর্থের বিনিময়ে ফটোগ্রাফি শেখাতে পারেন। এছাড়াও অন্য ফটোগ্রাফারদের এসিস্ট করার মাধ্যমে আয় করার পাশাপাশি আপনার পোর্টফোলিও বড় করার সুযোগও থাকছে। এভাবে কাজের সম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
ফটোগ্রাফি করে আয় – ব্লগিং
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে বিষয় ভালোবাসেন, তা নিয়ে ব্লগ পোস্টসমুহ পড়তে পছন্দ করেন। ফলস্বরূপ অনলাইনে যেকোনো বিষয়ে ব্লগের ব্যাপক চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছেন। ফটোগ্রাফি সম্পর্কিত আপনার জ্ঞান, মতামত ইত্যাদি একটি ব্লগ খুলে সেখানে পোস্ট করতে পারেন। ওয়েবসাইট খুলে ব্লগ পোস্ট করার পর ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে পারবেন। আমাদের ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার সেরা ৮ প্ল্যাটফর্ম পোস্ট থেকে একটি ফ্রি সাইট খোলার সার্ভিস বেছে নিলে বিনামূল্যেই আপনার ব্লগ শুরু করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া
আপনার তোলা সেরা ছবিগুলো অবশ্যই ছবির জগৎ বলে বিবেচিত ইন্সটাগ্রামে আপলোড করতে ভুলবেন না কিন্তু। এতে ফটোগ্রাফি নিয়ে আপনার দক্ষতার প্রচারের পাশাপাশি আপনার কাজের নতুন মাধ্যম ও খুলে যেতে পারে। ইন্সটাগ্রাম বা এই ধরনের ফটোগ্রাফি বিষয়ক ওয়েবসাইট মূলত আপনার কাজের দক্ষতার একটি প্রমাণস্বরূপ, যার ফলে এই তালিকায় উল্লিখিত কাজসমুহ পেতে আপনার সুবিধা হবে।
ফটোগ্রাফি কনটেস্ট
অন্যান্য সব বিষয়ের মত ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রেও বিভিন্ন কনটেস্ট বা প্রতিযোগিতা সবসময় চলতে থাকে। এসব কনটেস্টে মূলত নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ফটোগ্রাফি করতে হয় ও যার ফটো বিজয়ি বলে ঘোষণা হয়, তাকে বা তাদের কনটেস্ট উইনার ঘোষণা করে পুরস্কার হিসেবে অর্থ ও অন্যান্য সামগ্রী প্রদান করা হয়।
আপনি যদি ফটোগ্রাফি কনটেস্ট জিততে সক্ষম হন, তবে কম সময়ে ফটোগ্রাফি এর মাধ্যমে অনেক আয় করার অন্যতম সেরা উপায় এটি। অনলাইনে সার্চ করলে দেশী বিদেশী বিভিন্ন ফটোগ্রাফি কনটেস্ট এর খোঁজ পেয়ে যাবেন।