কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন
ভিডিও কনটেন্ট এর জনপ্রিয়তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা। ইউটিউব থেকে আয় করার ব্যাপারটি বর্তমানে কারোই অজানা নয়। তবে ইউটিউব থেকে আয় করার রয়েছে একাধিক উপায়। চলুন জেনে নেয়া যাক ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় বা কিভাবে ইউটিউব থেকে ইনকাম করবেন।
কিভাবে ইউটিউব থেকে আয় করবেন
অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র এডসেন্স মনিটাইজেশন এর মাধ্যমেই ইউটিউব থেকে আয় সম্ভব। তবে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ইউটিউব থেকে আয় এর একাধিক উপায় রয়েছে। যেমনঃ
- ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম
- প্রোডাক্ট বিক্রি
- ভিডিও এডিটিং সার্ভিস
- প্রোডাক্ট রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
- অনলাইন কোর্স
- স্পন্সরড কনটেন্ট
- ডোনেশন
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম থেকে আয়
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শুধুমাত্র এডসেন্স নিয়ে টাকা আয় করা যায় তা নয়, এর পাশাপাশি আরো অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ইউটিউব প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন ফিস, সুপার চ্যাট, চ্যানেল মেম্বারশিপ প্রোগ্রাম ইত্যাদি সুবিধা পাওয়া যায়।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে আপনার দরকার হবে একটি ইউটিউব চ্যানেল এর। ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম জানতে এখানে ক্লিক করুন।
ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে আপনার ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ মাসে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘন্টা ভিডিও ওয়াচটাইম থাকতে হবে। এছাড়াও ইউটিউব চ্যানেলে কোনো প্রকার কপিরাইট স্ট্রাইক থাকা যাবেনা।
ইউটিউব চ্যানেল পার্টনার প্রোগ্রামের ব্যাপারটি মনিটাইজেশন নামে পরিচিত। আপনার ইউটিউব চ্যানেল মনিটাইজেশন এর জন্য উপযুক্ত কিনা, তা জানতেঃ
- ইউটিউব স্টুডিও তে প্রবেশ করুন
- বাম পাশের মেন্যু থেকে Monetisation এ ক্লিক করুন
- এরপর আপনার চ্যানেলের মনেটাইজেশন এলিজিবিটি স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন
- আপনার চ্যানেল মনেটাইজেশন এর জন্য উপযুক্ত হলে Apply Now বাটন দেখতে পাবেন
- আপনার চ্যানেল মনেটাইজেশনের জন্য এখনো উপযুক্ত না হলে এমন কিছু প্রদর্শিত হবে
আপনার ইউটিউব চ্যানেল যদি ইউটিউবের অফিসিয়াল এডসেন্স একাউন্ট গাইডকে সমর্থন করে, সেক্ষেত্রে আপনি এডসেন্স একাউন্ট এর একাউন্ট খুলতে পারেন। ইউটিউব চ্যানেল মনেটাইজেশন এর ক্ষেত্রে কিছু গাইডলাইন রয়েছে। যেমনঃ
- এড রেভিনিউঃ ইউটিউব ভিডিও এর এড রেভিনিউ পেতে হলে আপনার ভিডিও এডভার্টাইজার-ফ্রেন্ডলি হতে হবে যাতে বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার ভিডিওতে এড শো করতে রাজি হয়। এছাড়াও এড রেভিনিউ পেতে গেলে অবশ্যই আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
- ইউটিউব প্রিমিয়াম রেভিনিউঃ কোনো ইউটিউব প্রিমিয়াম মেম্বার যদি আপনার ইউটিউব ভিডিও দেখে, সেক্ষেত্রে আপনি ওই ভিউয়ার এর সাবস্ক্রিপশন এর কিছু অংশ রেভিনিউ হিসেবে পাবেন।
- চ্যানেল মেম্বারশিপঃ চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবারদের কাছে মেম্বারশিপ সেল করতে হলে মিনিমাম ৩০হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।
- সুপার চ্যাটঃ লাইভ স্ট্রিমের সময় চ্যাটে ভিউয়াররা যে অর্থ প্রদান করে সেটাকে সুপার চ্যাট বলে। তবে বাংলাদেশেত ইউটিউবে সুপার চ্যাট ফিচারটি নেই।
উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।
প্রোডাক্ট বিক্রি করে ইউটিউব থেকে আয়
বিভিন্ন পণ্য বিক্রি বর্তমানে ইউটিউবারদের ও পাবলিক ফিগারদের আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠছে। আপনার চ্যানেলের যদি যথেষ্ট পরিমাণ ফ্যান ফলোয়িং থাকে, যারা আপনার কাছ থেকে কিনতে আগ্রহী হবে, সেক্ষেত্রে ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবদের কাছে বিক্রি করতে পারেন মার্চেন্ডাইজ।
আপনার ইউটিউব চ্যানেলও যেহেতু একটি ব্র্যান্ড, সেক্ষেত্রে বিক্রি হওয়া মার্চেন্ডাইজ এ নিজস্বতা রাখার চেষ্টা করুন। এর ফলে চ্যানেল হিসেবে আপনার প্রোমোশন হবে ফ্রিতেই।
এছাড়াও আপনি ভিউয়ারদের কাছ থেকেও পণ্য নিয়ে মতামত নিতে পারেন। এর ফলে খুব সহজেই পণ্য বিক্রি করা যাবে। মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করতে পারেন অনলাইন শপ খুলে কিংবা ফেসবুক পেজেও।
ভিডিও এডিটিং সার্ভিস দিয়ে আয়
আপনি যেহেতু ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করবেন, সেক্ষেত্রে ভিডিও এডিটিংয়ে পারদর্শীতা থাকার কথা। আপনি যদি মনে করেন আপনার ভিডিও এডিটিং অন্যদের চেয়ে ভালো ও আপনি এই কাজে পারদর্শী, সেক্ষেত্রে আপনি ভিডিও এডিটিং সার্ভিস প্রদান করতে পারেন।
অর্থের বিনিময়ে ভিডিও এডিটিং সার্ভিস প্রদান করতে পারেন অন্য ইউটিউবারদের। এছাড়াও বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মেও ভিডিও এডিটিং এর কাজ করে ভালোই আয় করা যায়।
ভিডিও এডিটিং অত্যন্ত ডিমান্ডিং একটি সার্ভিস। তাই এই বিষয়ে পারদর্শিতা থাকলে অন্যদের সাহায্য করে আয় করতে পারেন।
প্রোডাক্ট রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইউটিউব থেকে আয়
কোনো নতুন পণ্য সম্পর্কে জানতে কিংবা কোনো প্রডাক্ট কেনার সিদ্ধান্ত নিতে বিশাল অংকের ভিউয়ার ইউটিউবের উপর নির্ভর করে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রোডাক্ট রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় করা সম্ভব।
বর্তমানে ইউটিউবে সকল ধরনের প্রোডাক্ট রিভিউ এর প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে। এসব প্রোডাক্ট রিভিউ এর ডেসক্রিপশনে কেনার অ্যাফিলিয়েট লিংক প্রদান করার মাধ্যমে ভিউয়ার এর বায়িং ডিসিশন সহজ করার পাশাপাশি আপনিও কমিশন পেতে পারেন। অন্য প্রোডাক্টের পাশাপাশি আপনার নিজস্ব মার্চেন্ডাইজ এর প্রচারও করতে পারেন আপনার ভিডিও এর মাধ্যমেই।
অনলাইন কোর্স বিক্রি করে ইউটিউব থেকে আয়
আপনি যদি কোনো শিক্ষামূলক ইউটিউব চ্যানেল চালান, সেক্ষেত্রে আপনি যা শেখান তার সেরাটা দিয়ে তৈরি করতে পারেন অনলাইন কোর্স। এছাড়াও আপনার ভিডিও এর কোনো নির্দিষ্ট ব্যাপার যদি ভিউয়াররা শিখতে ইচ্ছুক হয়, সেক্ষেত্রে অনলাইন কোর্স সেল করা হতে পারেন ইউটিউব থেকে আপনার আয়ের একটি উৎস।
স্পন্সরড কনটেন্ট এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয়
আপনার চ্যানেলে যদি যথেষ্ট পরিমাণ সাবস্ক্রাইবার থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ থেকেই আপনার সাথে স্পন্সরশিপ এর ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করতে পারে। এছাড়াও আপনার ভিডিও ও কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর টপিক একই ধরনের হলে আপনিও উক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে স্পন্সরশীপ এর ব্যাপারে আলাপ করতে যোগাযোগ করতে পারে।
স্পন্সরড কনটেন্ট বর্তমানে ইউটিউবারদের আয়ের একটি প্রধান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সার্ভিস এর প্রমোশনের জন্য ভিডিও এর নির্দিষ্ট সেগমেন্ট কিংবা সম্পূর্ণ ভিডিও অর্থের বিনিময়ে কিনে নেয়। এর পাশাপাশিও অনেক ধরনের স্পন্সরড কনটেন্ট ডিল রয়েছে।
ডোনেশন এর মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয়
আপনার ইউটিউব চ্যানেল যদি ছোট হয় এবং ইউটিউবই আপনার একমাত্র কাজ ও আয়ের উৎস হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে ফুল-টাইম ইউটিউবিং আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
ছোটো কনটেন্ট ক্রিয়েটর যারা ইউটিউব থেকে অন্য উপায়ে যথেষ্ট পরিমাণ আয় করতে পারেনা, তারা সরাসরি সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নিতে পারে। প্যাট্রিয়ন এর মতো সাইট এই ব্যাপারটিকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে।
ইউটিউব থেকে আয় সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নের উত্তর
প্রতি ১০০০ ভিউতে ইউটিউব ৩ থেকে ৫ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বা কমবেশি হতে পারে। এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ইউটিউব আয় করে ও তা কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সাথে শেয়ার করে থাকে। আপনার ভিডিও বা বিজ্ঞাপনে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু দেখালে তাতে সমস্যা হতে পারে। আপনার চ্যানেলের কনটেন্ট এবং প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে একজন প্রসিদ্ধ আলেমের সাথে কথা বললে আপনি এই প্রশ্নের উত্তর পাবেন।
ইউটিউব থেকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা তোলা যায়।