১০ টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
যারা ফ্রিল্যান্সিং শেখেন বা ফ্রিল্যান্সিং এর সাথে পরিচিত তারা অনেকে মনে করেন আপওয়ার্ক বা ফাইভার এই দুটো বাদে আর কোন জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট নেই, কথাটা আংশিক সত্য। হ্যাঁ, এই দুটোই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট, কিন্তু এই দু’টোর বাইরেও আরো অনেক ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদের জনপ্রিয়তা ফাইভার এবং আপওয়ার্ক থেকে কম হলেও, ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কিছু ওয়েবসাইট নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।
একটা কথা আমাদের সকলের জানা দরকার, যখন কোন কাজের সেলার সংখ্যা বেশি হয়ে যায়, তখন কাজ পেতে হলে অন্য সবার থেকে আরো বেশি স্পেসিফিক হতে হয়। যেমন ধরুন কেউ আর্টকেল রাইটিং পারে। কিন্তু দেখা গেলো এই আর্টিকেল রাইটিং পারা লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এখন কাজ পেতে হলে তাকে আরো বেশি স্পেসিফিক হতে হবে। কারণ আর্টিকেল রাইটিং এর শাখা প্রশাখা অনেক। কেউ যদি তার টাইটেলে লেখে ‘স্পোর্টস আর্টিকেল রাইটার’, যাকে মূলত আমরা বলছি স্পেসিফিক, তাহলে তার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেও বিষয়টি এমন। এখানেও অনেক স্পেসিফিক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেখানে কাজের সংখ্যাও অনেক বেশি। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।
সেরা ১০ টি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস
ফাইভার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মার্কেটপ্লেস জনপ্রিয়তার তুঙ্গে এর অনেকগুলো কারণ থাকলেও, বিশেষ কারণ হলো ফাইভারে এখনো অবধি ফ্রিতে কাজের জন্য বিড করা যায়। যা অন্য মার্কেটপ্লেসে করা যায় না। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে শুরুতে বা মাসে একবার কিছু সংখ্যক বিড করার মত কানেকশন দিয়ে থাকে। কিন্তু ফাইভারে এই বিষয়টি সম্পূর্ন ফ্রি। তাই নতুনদের জন্য এই মার্কেটপ্লেস অনেক জনপ্রিয়।
ক্লায়েন্টদের দিক থেকেও ফাইভারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ফাইভারের নামকরণ করা হয়েছিলো কারণ এখানে কাজের শুরু সর্বনিম্ন ৫ ডলার থেকে। তাই অধিকাংশ ক্লায়েন্ট মনে করে থাকেন সবচেয়ে সস্তায় ফ্রিল্যান্সার পাওয়া যায় ফাইভারে, যদিও ব্যতিক্রম রয়েছে। এখানে যে শুধু ৫ ডলারের কাজ থাকে তা না, সর্বোচ্চ ৫০০০ ডলার ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়।
আপওয়ার্ক
আপওয়ার্ক আমাদের আইসিটি বইয়ে পড়া ওডেক্স এর নতুন নাম, এরাই সর্বপ্রথম ১৯৯৮ সনে ফ্রিল্যান্সিং এর আইডিয়া নিয়ে আসেন। আপওয়ার্ক অনেক মানসম্মত মার্কেটপ্লেস। এখানে আপনি পৃথীবির অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠানের কাজ পাবেন। যেমন -মাইক্রোসফট, এয়ারবার্ন, এবং ড্রপবক্স ইত্যাদি।
আপওয়ার্কের নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ, সবকিছু ব্যবহার বান্ধব হওয়ায় স্মার্ট মার্কেটপ্লেস হিসেবে পরিচিত। এখানে দুই ধরণের কাজ পাওয়া যায়, যেমন ঘন্টা ভিত্তিক এবং চুক্তি ভিত্তিক। যদি কেউ ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে স্মার্ট এবং ফ্লেক্সিবল মার্কেটপ্লেস খুঁজে থাকেন, তাহলে আপওয়ার্ক চেক করে দেখতে পারেন।
টপটাল
টপটাল বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সেরা ৩% ট্যালেন্টেড ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে থাকে। আপনার যদি বেশ ভালো ফ্রিল্যান্সিং স্কিল থাকে, তাহলে আপনিও তাদের ৩% ফ্রিল্যান্সারদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, এর জন্য আপনার সবচেয়ে ভালো মানের স্কিল প্রয়োজন। এরা মূলত সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডিজাইনার, ফাইন্যান্স এক্সপার্ট এবং প্রজেক্ট ম্যানেজার সহ আরো বেশ কিছু স্পেসিফিক সুবিধা দিয়ে থাকেন। বেশ কিছু ফ্রিল্যান্স সাইট সরাসরি সকলকে এক্সেস দেওয়ার কারনে অনেকে আছেন ভালো মানের ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে হিমশীম খেয়ে যান। তাদের জন্য এই সকল ওয়েবসাইট অনেক মানসম্মত ফ্রিল্যান্সারদের হায়ার করে রাখে। যাতে আপনি আপনার যথাযথ কাজ করিয়ে নিতে পারেন কোন রকম ভোগান্তি ছাড়া।
সিমপ্লি হায়ার্ড
সিমপ্লি হায়ার্ড ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে, এখানে আপনার লোকেশন থেকে নিকটস্থ ফ্রিল্যান্সার হায়ার করার সুযোগ পাবেন। সেই সঙ্গে এই ওয়েবসাইটের আরো একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, সর্বোচ্চ স্যালারি এবং আপনি যে কাজ নির্বাচন করেছেন তার আনুমানিক প্রাইস কত হতে পারে তা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকে। এছাড়াও তাদের ব্লগ গুলোও অত্যন্ত রিসোর্সফুল, সেখান থেকে আপনি শেখার মত অনেক উপাদান পাবেন।
পিপল পার আওয়ার
ওয়েবসাইটের নামের সাথে কাজেরও মিল রয়েছে। এখানে ঘন্টা ভিত্তিক চুক্তিতে একজন ফ্রিল্যান্সার কাজ করে থাকেন। পিপল পার আওয়ার বাংলাদেশে অনেকের নিকট পরিচিত বেশ জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট। এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে প্রায় দেড় বিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার রয়েছে এবং এখানে অন্যান্য রেটিং সিস্টেম রয়েছে, যা ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পাইয়ে দিতে সাহায্য করে। পিপল পার আওয়ারও একটি ফ্রি ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট, তাই এখানে কাজ করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। ভালো মানের কাজ এবং রিজনেবল প্রাইস সংযুক্ত না করলে এখানে কাজ পাওয়া বেশ মুশকিল।
অ্যাকুয়েন্ট
অ্যাকুয়েন্ট ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি তাদের গুনগত মান ধরে রাখার জন্য অনেক এওয়ার্ড পেয়েছে। তারা সবার নিকট পরিচিত সবচেয়ে ভালো মানের ফ্রিল্যান্সার ডেলিভারি দেওয়ার ক্ষেত্র হিসেবে। তারা দাবি করে থাকে, তাদের ফ্রিল্যান্সারগুলো অনেক মানসম্মত এবং ক্রিয়েটিভ।
অ্যাকুয়েন্ট সাধারণত ফ্রিল্যান্সার হায়ার করার ক্ষেত্রে ২+ বছরের অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। তবে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য তাদের এই নিয়মে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। ভালো কাজের স্কিল থাকলে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটরাও তাদের ফ্রিল্যান্সার হতে পারবে।
ক্রাউডেড
ক্রাউডেড একটি টেক ফ্রিল্যান্সিং ফ্ল্যাটফর্ম। যেখানে প্রায় ১১ হাজার ফ্রিল্যান্সার রয়েছে ৪০০ এরও অধিক ফ্ল্যাটফর্মের সাথে সংযুক্ত। ক্রাউডেড ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটটি সবচেয়ে জনপ্রিয় কারণ তাদের নিয়োগ সিস্টেম অনেক আধুনিক। তারা ফ্রিল্যান্সার নিয়োগের ক্ষেত্রে AI-Powered recruitment process অনুসরণ করে থাকেন। এই ওয়েবসাইটটি ফ্রিল্যান্সারদের র্যাঙ্ক করে তাদের প্রাইস, এক্সপেরিয়েন্স, এবং স্কিল এর উপর নির্ভর করে। এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটের কাজের জন্য আবেদন পদ্ধতিও বেশ সুন্দর এবং সহজ।
৯৯ডিজাইনস
৯৯ডিজাইনস এর নামের মতই এর কাজের ধরণের সঙ্গে মিল রয়েছে। এই ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট মূলত ফোকাস করে থাকে, ডিজাইনের প্রতি বিশেষ করে লোগো এবং বুক কভারের জন্য এরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এখানে চাইলে ডিজাইনের কন্টেস্টও সৃষ্টি করতে পারে, কার চেয়ে কার কাজ কত বেটার তা নির্বাচন করার জন্য এই ধরনের কম্পিটিশনের বেশ প্রয়োজন রয়েছে।
এই ওয়েবসাইট ফ্রিল্যান্সারদের একেবারে শূন্য থেকে কাজ করার জন্য সুযোগ দিয়ে থাকে যা একজন ফ্রিল্যান্সারের সারা বিশ্বে তার দক্ষতা উন্মোচনের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। তাদের ব্লগেও বেশ ভালো রকম রিসোর্স রয়েছে, যা আপনার স্কিলকে আরো নতুন লেভেলে নিয়ে যেতে পারবে।
রাইটার এক্সেস
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্স রাইটার হতে চান তাহলে রাইটার এক্সেস হতে যাচ্ছে আপনার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ওয়েবসাইট। এখানে আপনি চাইলে সব রকম রাইটিং কভার করতে পারবেন। যেমন অনলাইন আর্টিকেল, কেইস স্টাডি, এবং টেক পেপারস ইত্যাদি।
এই ওয়েবসাইটে অনেক ভালো ভালো টুল রয়েছে, আপনার লেখার মান বিচার করার জন্য। বিশেষ করে কন্টেন্ট এনালাইসিস, কি-ওয়ার্ড অপটিমাইজেশন, এবং কন্টেন্ট প্ল্যানার এর মত অনেক ভালো ভালো টুলস রয়েছে। যারা রাইটিংকে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি একটি ওয়েলকামিং সেক্টর।
ফ্রিল্যান্সার
ফ্রিল্যান্সার নামক মার্কেটপ্লেসটি একটি অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠান। যাদের যাত্রা শুরু হয়েছে ২০০৯ সালের শেষের দিকে। বাংলাদেশে এই ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটের অনেক নাম ডাক রয়েছে। অনেকের কাছে পরিচিত এই ওয়েবসাইটটি। এখানে রয়েছে প্রায় ৩২ মিলিয়ন রেজিস্টার ফ্রিল্যান্সার। যারা বিভিন্ন রকম সেবা দিয়ে থাকেন। ফ্রিল্যান্সারদের তুলনায় এখানে জব এর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক একটি ওয়েবসাইট এটি, এখানে রেজিস্টার করা খুব সহজ। তাই নতুন ফ্রিল্যান্সাররা এখানে যুক্ত হতে পারেন। এটি ১১টিরও অধিক ভাষায় সেবা দিয়ে থাকে বায়ার এবং সেলারদের।
এই দশটি ছাড়াও আরো অনেক জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যার মাধ্যমে খুব সহজে কেউ কাজ খুঁজে নিতে পারেন বা কাজ দিতে পারেন।